Health & Skin Care
ঘরোয়া উপায়ে শুষ্ক ত্বকের যত্ন কীভাবে নেবেন
অনেকের ত্বক শুষ্ক। আমরা হয়তো জানি না, শুষ্ক ত্বকের জন্য প্রয়োজন একটু বেশি যত্ন। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে ত্বক আর্দ্রতা হারাতে থাকে, দেখা দেয় বয়সের দাগ আর তাই ত্বকের প্রতি যত্নশীল হতে হয়। ত্বকের যত্নে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে আমাদের সুস্থ সুন্দর ও সতেজ থাকতে পারে। আজকে আমরা জানব কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে শুষ্ক ত্বকের যত্ন আপনি নিতে পারেন।
কমলালেবু
কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। আর আমরা জানি ত্বকের জন্য ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কমলালেবু খাওয়ার পাশাপাশি এর খোসা দিয়ে করতে পারেন রূপচর্চা। কমলালেবুর খোসা শুকনা করে রেখে দিন। এটি পরবর্তীতে গুড়ো করে, সরবাটা, ময়দা বা বেসন এর সাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ভাল ফলাফল পেতে পারেন।
মধু ও পাকা কলা
ত্বককে নরম ও কোমল করে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন পাকা কলা ও মধু। পাকা কলা ও মধু এক সাথে মিশিয়ে সেটা প্রলেপের মত করে মুখে লাগান। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা কমে ত্বকের আর্দ্রতা ফিরে আসবে।
দুধ/ দই
যাদের ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক, ও ফাটা তাদের প্রায়ই ত্বকে জ্বালা পুড়া দেখা দেয়। এই সমস্যায় আপনি দুধ বা দই ব্যবহার করতে পারেন। দুধে নরম কাপড় বা তুলো ভিজিয়ে ফাটা বা রুক্ষ ত্বকে লাগান। মিনিট দশেক রেখে দিন এতে করে ত্বকের জ্বালা কমে যাবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেও আপনি দুধ বা দই ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালো ভেরা
অ্যালো ভেরা ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী একটি উদ্ভিদ। অ্যালো ভেরার পাতা কেটে এর শাঁস বের করুন। ফাটা ত্বক, জ্বালাপোড়ায় লাগালে মুহূর্তেই আরাম পাওয়া যায়। শীত কালে এটি আপনার ত্বককে আর্দ্র রাখতে পারে। হটাৎ করে শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা কোথাও আঘাত পেলে অ্যালো ভেরা জেল লাগালে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
নারকেল তেল
অনেকে ভাবতে পারেন নারিকেল তেল হয়তো শুধু মাত্র চুলের যত্নে ব্যবহার করা যায় কিন্তু আপনি জেনে খুশি হবেন নারকেল তেলের ব্যবহার রয়েছে ত্বকের যত্নেও। শীত কালে ত্বক ফাটার প্রবণতা থাকে। এই সমস্যায় নারিকেল তেল কাজে আসতে পারে। ঘুমাতে যাবার আগে নির্দিষ্ট অংশের ত্বক ভিজিয়ে রাখুন, আর্দ্রতা আসলে সেখানে নারিকেল তেল মাখিয়ে ঘুমিয়ে যান। কিছু দিন নিয়মিত ব্যবহার করলে পার্থক্যটা নিজেই ধরতে পারবেন।
অলিভ অয়েল
ত্বকের যত্নে আপনি ব্যবহার করতে পারেন অলিভ অয়েল। শীতের দিনে অলিভ অয়েল দীর্ঘ সময় আপনার ত্বককে সতেজ রাখতে পারে। অলিভ অয়েলে থাকা ফ্যাটি এসিড ও অন্টিঅক্সিডান্ট ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। শীতে যাদের চামড়া ফাটে তাদের জন্য অলিভ অয়েল ওষুধের মত কাজ করে।
হৃদরোগ থেকে বাঁচতে যেভাবে হৃৎপিণ্ড এর যত্ন নেবেন
মানবদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে হৃৎপিণ্ড। এই হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালিত হয়। শরীরের টিস্যুগুলো কার্যকর রাখতে সার্বক্ষণিক পুষ্টি কণা সরবারহ করতে সাহায্য করে হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড স্পন্দনের মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত পরিবাহিত হয়, এই স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের বেঁচে থাকার উপায় নেই।
মানুষের হৃৎপিণ্ড মূলত চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট। হৃৎপিণ্ডকে বাম ও ডান দুটি অংশে ভাগ করা হয়। পেরিকার্ডিয়াম নামক একটি পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে পুরো হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড এর প্রাচীর যোজক কলা ও অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে গঠিত। এর উপর দিকে থাকে দুটি আট্রিয়া বা অলিন্দ ও নিচের দিকে থাকে দুটি ভেন্ট্রিকল বা নিলয়।
বিশ্ব জুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে হৃদরোগীর সংখ্যা। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, পরিশ্রমের অভাব, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার, ঘুম, পরিশ্রম আপনাকে হৃদরোগ থেকে বাচাতে পারে। হৃদরোগ এড়াতে আপনাকে থাকতে হবে সচেতন, সামান্য অসচেতনয় মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়তে পারেন আপনিও।
কিভাবে হৃদযন্ত্র ভাল রাখবেন কী কী নিয়ম মেনে চলবেন সেটা বিষয় গুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
অলস জীবনযাত্রা হাজার রোগে কারণ হতে পারে। হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন অন্তত হাটার অভ্যাস করুন। সকালে নিয়মিত হাটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী, বিকেলেও হাটতে পারেন। অলস জীবনযাপন পরিত্যাগ করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
হৃদযন্ত্র ভাল রাখতে আপনাকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এমন খাবার খেতে হবে। শাকসবজি বেশি বেশি খেতে হবে ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আঁশ বা ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবারে শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় যা দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন উপকার করে। শিম, মটরশুঁটি, ডালে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে। তাছাড়া প্রতিদিন শাকসবজি, ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন
হৃদরোগের অন্যতম কারণ দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার যতটা কম খাওয়া যায় তত ভাল। দেহের জন্য মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাট ক্ষতিকর। এটি এমন একটি ফ্যাট যা খাবারের উপর চর্বি জমাট বাধায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার হচ্ছে, চিজ, কেক , লাল মাংস, দই, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেল ইত্যাদি। তবে স্যাচুরেটেড নয় এমন চর্বি খাওয়া যেতে পারে যেমন, তেল সমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও বীজ। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষজ্ঞরা অলিভ, রেপসিড, সানফ্লাওয়ার, কর্ন এবং ওয়ালনাট তেল দিয়ে রান্নার বিষয়ে পরামর্শ দেন।
ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপানের খারাপ দিক সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। ধূমপান হৃদরোগের অন্যতম কারণ। ধূমপান ত্যাগ করতে নিজের মনোবল কে দৃঢ় করুন। ধূমপানের ক্ষতিকর দিক গুলো নিয়ে ভাবুন নিজেকে ধূমপান থেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখুন।
লবণ খাবার অভ্যাস ত্যাগ করুন
প্রয়োজনের বেশি লবণ খাওয়া ঠিক না, তাছাড়া খাবার সাথে কাচা লবণ খাওয়া একদমই উচিৎ না। লবণ বেশি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। লবণ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খান
ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেসব খাবারে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে সেগুলো আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম প্রতিরোধ করে উচ্চ রক্তচাপ। সুতরাং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খান।
সময় থাকতে কিডনির যত্ন নিন! কীভাবে ভাল থাকবে কিডনি?
মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। দেহকে সুস্থ রাখতে মানবদেহের দুটি কিডনির ভূমিকা অনস্বীকার্য। শরীর জুড়ে সঠিক ভাবে পরিষ্কার রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করে কিডনি। তাছাড়া দেহ থেকে দূষিত পদার্থ ছেকে বের করতেও সাহায্য করে এটি। কিডনি সঠিক ভাবে কাজ করলে ভাল থাকে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস।
অনেকে কিডনির যত্ন সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানে না ফলে কম বয়সে দেখা দেয় কিডনির বিভিন্ন সমস্যা। আজকে আমরা কিডনি ভাল রাখতে কি করণীয় সেটা জানব।
কিডনি ভালো রাখতে দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ। পর্যাপ্ত পানি পান করলে কিডনি সংক্রান্ত অনেক সমস্যারই সমাধান পাওয়া যায়। ঝুঁকি কমে যায় কিডনিতে পাথরের। একজন ব্যক্তির দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিৎ। কিডনি ভাল রাখতে আপনাকে খুব বেশি নিয়ম কানুন মানতে হবে এমনটি নয় । কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখলে এবং সচেতন থাকে কিডনির যেকোনো সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
কিডনি সুস্থ রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে পানিটি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে। যখন আপনি সঠিক মাত্রায় বিশুদ্ধ পানি পান করবেন তখন আপনার কিডনির কার্যাবলী সঠিক ভাবে পরিচালিত হবে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির দৈনিক ২-৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিৎ।
মাত্রাতিরিক্ত কোমল পানীয় পরিহার করুন
মানব দেহের জন্য অতিরিক্ত কোমল পানীয়, কফি, চা ইত্যাদি কখনোই ভাল নয়। কোমল পানীয়তে থাকা ফ্যাট একদিকে যেমন ক্ষতিকর তেমনি ক্যাফেইন শরীরের পানি স্বল্পতা তৈরি করতে পারে। আর শরীরের পানি স্বল্পতায় কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।
ধূমপান পরিহার করুন
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপান যে শুধু মাত্র ফুসফুসে সমস্যা তৈরি করে এমনটি নয় ধূমপানের ফলে শরীরে আরও অনেক সমস্যা হতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে আপনার কিডনিতে।
বিনা প্রয়োজনে ওষুধ সেবন পরিহার করুন
আমাদের মধ্যে একটি বদভ্যাস দেখা যায় সেটা হল একটু অসুস্থ হলেই আমরা বিভিন্ন ট্যাবলেট খাই। হালকা ব্যথায় আমরা পেইন কিলার সেবন করি। এটা মোটেও উচিৎ নয়। এই অভ্যাসটি এখনি ত্যাগ করুন। অতিরিক্ত পেইন কিলার কিডনির কোষের সমস্যা তৈরি করে।
কাচা লবণ পরিহার করুন
খাবারের সাথে কাচা লবণ খাওয়া আজকেই পরিহার করুন। কাচা লবণে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে। কিডনি এগুলো বের করতে পারে না ফলে সোডিয়াম টুকু কিডনিতে থেকে যায়। যার ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না
অনেক আছেন ইচ্ছে করে প্রস্রাব আটকিয়ে রাখেন যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাছাড়া শহরে পর্যাপ্ত মোবাইল টয়লেট না থাকায় অনেকে চাইলেও পারে না। প্রস্রাব আটকে রাখলে সেই চাপ পড়ে কিডনিতে। দীর্ঘদিন এই অভ্যাস রাখলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।