Rannaghor
বিভিন্ন শীতের পিঠার রেসেপি
বাংলায় হেমন্ত মাস মানেই নবান্ন উৎসব। নতুন ধানের প্রথম রান্নাই মূলত নবান্ন। হেমন্তের পরেই আসে শীত, শীতে থেকে যায় হেমন্তের রেশ। শীতে ধুম পড়ে যায় নতুন চালের পিঠার, শীত মানেই বাহারি রকমের পিঠা তৈরির আয়োজন। চলুন দেখে নেয়া যাক শীতের জনপ্রিয় কিছু পিঠা এবং সেগুলোর রেসিপি।
পাটিসাপটা পিঠা
পাটিসাপটা দুই বাংলারই বেশ জনপ্রিয় একটা পিঠা, জেনে নিব এর প্রস্তুত প্রণালী। উপকরণ হিসেবে লাগবে, চালের গুড়া ৪ কাপ, দুধ ১ লিটার, ময়দা ২ কাপ, কাজু বাদাম পেস্ট ১/২ কাপ, সুজি ১/২ কাপ, চিনি ৩ কাপ, পানি পরিমাণ মতো ও সামান্য পানি।
প্রস্তুত প্রণালি:
একটি পাত্রে প্রথমে দুধ ঘন করে গরম করে নিন। এতে চিনি ও কাজুবাদাম পেস্ট ও সুজি দিয়ে ভাল ভাবে ক্ষীর তৈরি করুন। এর মধ্যে চালের গুড়া, ময়দা ও চিনি দিয়ে ঘন করে পেস্ট করুন। এবার ফ্রাই প্যানে সামান্য তেল দিয়ে ব্রাশ করে নিন। মিশ্রণটি চামচে করে প্যানে দিয়ে রুটির মত করে ২/৩ মিনিট ঢেকে রেখে তার এক পাশে ক্ষীর দিয়ে ভাজ করে আঁচ দিন। ভাজা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
পাটিসাপটা একটা মজাদার পিঠা, ছেলে বুড়ো সবাই পাটিসাপটা খেতে পছন্দ করে।
নকশি পিঠা
নকশা সম্বলিত নকশি পিঠা বেশ মজাদার হয়। শীত আসলেই ঘরে ঘরে নকশি পিঠা দেখা যায়। নকশি পিঠার প্রস্তুত প্রণালী হিসেবে লাগবে চালের গুড়া ৪ কাপ, তিন কাপ পানি, সামান্য লবণ, এক চামচ ঘি, ৫০৯ গ্রাম তেল। পিঠার সিরা তৈরি করতে গুড় লাগবে ১ কাপ, চিনি ১ কাপ, পানি ২ কাপ এবং এগুলা একসাথে দিয়ে চুলায় কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে এবং সিরা তৈরি হবে।
প্রস্তুত প্রণালি:
পানিতে লবণ ও ঘি দিয়ে চুলায় দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে ফুটলে চালের গুঁড়া দিয়ে সেদ্ধ করে কাই তৈরি করে নিন। এবার প্রায় আধা ইঞ্চি পুরু করে রুটি বানিয়ে পছন্দমতো আকার দিয়ে কেটে নিন। খেজুর কাঁটা বা সুবিধা মত কিছু দিয়ে রুটিতে পছন্দমতো নকশা করুন। প্রথমে ডুবোতেলে ভেজে নিন। কিছুক্ষণ পর আবার তেলে ভেজে সিরায় দিয়ে ১ মিনিট রেখে তুলে নিন। ঠাণ্ডা হলে সুন্দর করে পরিবেশন করুন।
মালপোয়া
মালপোয়া তৈরি করতে লাগবে ১/২ লিটার দুধ, ১ কাপ চিনি, ১ কাপ পানি, ১ চা চামচ এলাচ গুড়ো, ময়দা ১/২ কাপ, দুধ ১/২ কাপ, ১ টেবিল চা চামচ চিনির গুড়ো, ঘি ১ টেবিল চামচ এবং ১/৪ চামচ বেকিং সোডা।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে এক লিটার দুধ ভাল করে চুলায় দিয়ে সেটা আধা লিটারে নিয়ে আসুন। অন্য আরেকটি পাত্রে সিরা তৈরি করুন, পানি এবং পরিমাণ মত চিনি দিয়ে সিরা তৈরি করুন। কিছুক্ষণ তাপে রেখে ঘন হয়ে এলে সিরার উপর এলাচ গুড়া ছিটিয়ে দিন। দুধের সাথে ময়দা মিশিয়ে নিন, এমন ভাবে মিশাবেন যেন দানা দানা না থাকে । দুধ এবং ময়দার মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে তাতে তরল দুধ ভাল করে মিশিয়ে নিন। পরে চিনির গুঁড়ো দিয়ে আবার মিশিয়ে নিন সাথে বেকিং পাওডারও মেশান। খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণটি যেন বেশি ঘন না হয়। প্যান গরম হলে এতে ঘি দিন । এবার মিশ্রনটি পিঠা আকারে ছেড়ে দিন। ভাজা হয়ে গেলে সিরার মধ্যে রেখে দিন কিছুক্ষণ। সব শেষ সিরা থেকে নামিয়ে মালপোয়া পরিবেশন করুন।
নারকেলের তিল পুলি
পুলি পিঠা শীতের দিনের একটি মুখরোচক খাবার। এটি তৈরিতে উপকরণ হিসেবে লাগবে, আধা কাপ ভাজা তিলের গুড়া, খেজুরের গুড় ১ কাপ, এক চিমটি এলাচ গুড়া, দারচিনি ২-৩ টা, দুই কাপ আতপ চালের গুড়া, দেড় কাপ পানি, পরিমাণ মত লবণ, পিঠা ভাজার জন্য দুই কাপ তেল।
প্রস্তুত প্রণালী:
কুরানো নারকেল ও গুড় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না করতে হবে। একটু শক্ত হয়ে এলে এলাচ, তিল ও চালের গুঁড়া ছড়িয়ে আরও কিছুক্ষণ তাপে রেখে দিতে হবে। তেল উঠে পুর পাকানোর মতো শক্ত হলে সেটা নামিয়ে ঠাণ্ডা করে লম্বাভাবে সব পুর বানিয়ে রাখতে হবে। চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে চুলার আঁচ কমিয়ে ভালভাবে নাড়তে হবে, যাতে খামিরে কোনও চাকা না থাকে। এবার রুটি বানাতে হবে, রুটির এক কিনারে পুর রেখে বাঁকানো চাঁদের মতো উল্টে পিঠে আটকে দিতে হবে। প্রয়োজনে নকশা করে গরম তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে।
চিতই পিঠা
শীতে মজাদার পিঠার মধ্যে চিতই পিঠাও একটি মজার পিঠা। গ্রামের ঘরে ঘরে মায়েরা এই চিতই পিঠা তৈরি করে। উপকরণ হিসেবে লাগবে ২ কাপ চালের গুড়া, পরিমাণ মত লবণ।
প্রস্তুত প্রণালী:
চালের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণ যেন খুব বেশি ঘন বা পাতলা না হয়। পিঠা যে ছাঁচে বা পাত্রে ভাজবেন সেটাতে সামান্য তেল মাখিয়ে নিন। এবার পিঠা বানানোর পালা। ছাঁচ বা পাত্র রেডি হলে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ গোলা ঢালুন। ২ থেকে ২ মিনিট পর পিঠা তুলে ফেলুন। তৈরি হয়ে গেল মজাদার চিতই পিঠা। এই পিঠা এখন বিভিন্ন রকম ভর্তা, ভুনা মাংস দিয়ে খাওয়া যাবে। ভর্তার মধ্যে শুটকি ভর্তা, চ্যাপা ভর্তা, সরিষা ভর্তা এই পিঠার সাথে ভাল লাগে।
ভাপা পিঠা
শীতের সকালে আপনাকে সতেজ করে তুলতে পারে গরম গরম ভাপা পিঠা। এই ভাপা পিঠা তৈরি করতে লাগবে, ২ কাপ সিদ্ধ চালের গুড়া, ১ কাপ খেজুরের গুড়, ১ কাপ নারিকেল কোরানো, এবং পরিমাণ মত লবণ।
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে চালের গুঁড়িতে লবণ মেশাতে হবে এর পর এর উপর হালকা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন দলা বেধে যায়। বাঁশের চালনিতে চেলে নিতে হবে। যে পাত্রে ভাপা পিঠা বানানো হবে সেটাতে পানি নিন। সেখানে একটা মুখ চিত্র ঢাকনা বসান এবং আটা দিয়ে আটকে দিন। এবার দুটি ছোট বাটি এবং দুই টুকরা কাপড় নিন। বাটিতে চালের গুড়ি দিয়ে মাঝখানে গর্ত করে নারিকেল ও গুড় দিন। এবার এক টুকরা পাতলা সুতির কাপড় ভিজিয়ে পিঠার বাটি ঢাকুন এবং মুখ উল্টে ছিদ্র ঢাকনার ওপর পিঠা রেখে সাবধানে বাটি খুলে পিঠা ঢেকে দিন। ভাল ভাবে সিদ্ধ হয়ে গেলে পিঠা উঠিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
দুধ-চিতই
চিতই পিঠা দুইভাবে খাওয়া যায়, এক পিঠা তৈরি করে বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে খাওয়া, দুই চিনি গুড় দুধের মিশ্রণে খাওয়া। দুধ-চিতই সাধারণ মিষ্টি হয়, এটি খেতেও অনেক সুস্বাদু। চলুন জেনে নেয়া যাক দুধ-চিতই বানানোর উপকরণ, চালের গুড়া ২ কাপ, পরিমাণ মত লবণ ও পানি, ১ লিটার দুধ, ২ কাপ গুড়।
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে চালের গুড়ায় পানি মিশিয়ে আপনাকে তরল মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে । মিশ্রণটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন সেটা বেশি ঘন বা পাতলা না হয়ে যায়। কিছুটা পাতলা হলে পিঠা নরম হয় । পিঠা ভাজার পাত্রটিতে হালকা তেল দিয়ে মাখান। এবার পরিমাণ মত মিশ্রণ পাত্রে ঢালুন। এখানে চিতই বানানোর পদ্ধতি আগের মতই । যেহেতু আমরা দুধ চিতই বানাবো সেহেতু ১ লিটার দুধ চুলার মধ্যে দিয়ে ঘন করুন। এবার এতে ২ কাপ গুড় দিয়ে সিরায় তৈরি করুন। মিষ্টি বাড়াতে চাইলে গুড়ের পরিমাণ বাড়াতেও পারেন।
সিরা তৈরি হয়ে গেলে সেখানে পিঠা ছেড়ে কিছুক্ষণ তাপে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে দুধ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। শীতের সকালে এই পিঠা খেতে মজা।